খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং অযোগ্য কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেওয়ার চাপের কারণে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)।
এমন চাপে কাজ করতে না পেরে সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চারজন এমডি পদত্যাগ করেছেন।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, এমডিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না, এই পরিস্থিতি তারই ইঙ্গিত দেয়। একই সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসরণ করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘যখন ব্যাংকে পেশাদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং ব্যাংক ভালো কাজ করে, তখন ব্যাংকের এমডিকে কখনই পদত্যাগের চেষ্টা করতে হয় না।’
ড. মনসুরের সঙ্গে একমত পোষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অনেক এমডি মনে করেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।
আরও পড়ুন: ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন আইএমএফ বোর্ডের
তিনি বলেন, এটি ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ের লক্ষণ। তাই আর্থিক খাতকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সজাগ হতে হবে।
সম্প্রতি ব্যাংক এশিয়া, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি পদত্যাগ করেছেন।
এর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক ও এসবিএসি ব্যাংকের এমডি বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে নিজ পদে ফিরলেও ব্যাংক এশিয়া ও আভিভা ফাইন্যান্সের পদত্যাগ করা এমডি আর ফিরে আসেননি। এই দুই প্রতিষ্ঠানে নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী গত ২৬ জুলাই পদত্যাগ করেন। পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান গত সেপ্টেম্বরে পদত্যাগ করেন। একই মাসে সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) এমডি হাবিবুর রহমানও পদত্যাগপত্র জমা দেন। সর্বশেষ পদত্যাগ করেন নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি আবদুল জব্বার।
পদত্যাগের ফলে এই খাতে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অস্থিরতা এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদত্যাগকারী এমডিদের ডেকেছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানকে ডেকে তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে পদত্যাগকারী এমডিদের দায়িত্বে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়।
এমডিদের তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ হস্তক্ষেপ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রক্ষা করবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই দায়িত্বে ফিরেছেন এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমান।
আরও পড়ুন: আইএমএফ ফর্মুলায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০.২৫ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান গত ১৯ নভেম্বর তার পদে ফিরে আসেন। এদিকে ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু তিনি কাজে ফিরতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
মেঘনা ব্যাংকের এমডি সোহেল আর কে হুসেইনকে তার স্থলাভিষিক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি তার দায়িত্বে ফিরে আসেননি।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক দূষণ সংকট: বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী স্থানীয়দের পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রকল্প গ্রহণ